তেঁতুলিয়া থেকেই দেখা যাচ্ছে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া
দার্জিলিং-এর টাইগার হিলই কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। কিন্তু যদি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই সেই দৃশ্য দেখতে পারেন তবে কেমন হয়? হ্যাঁ এমন সুযোগই রয়েছে।
কারণ তিন দিকে প্রতিবেশী ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার সীমান্তবেষ্টিত তেঁতুলিয়ায় হেমন্ত জুড়ে খুব কাছে দেখা যায় নেপালের আকাশচুম্বী হিমালয় পর্বত; ভারতের পাহাড়কন্যা দার্জিলিং আর মনোমুগ্ধকর কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই নান্দনিক গিরি-সৌন্দর্যের সঙ্গে আছে তেঁতুলিয়ার নিজস্ব ঐতিহ্যিক স্থাপত্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
আবহাওয়ার কারণে শীতকালে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আবহাওয়া ভালো হলে দেখা যেত। কিন্তু এই অক্টোবরে বিভিন্ন ট্রাভেলার্স গ্রুপে বহুজনের পোস্ট দেখা গেছে যারা কাঞ্চনজঙ্ঘা বেশ ভালোভাবে অবলোকন করে এসেছেন।
হিমালয় পর্বতমালার পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট ও কে-টুর পরের অবস্থানে রয়েছে অনুপম সৌন্দর্যের গিরিবধূ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এটি পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ, যার উচ্চতা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘার রয়েছে চমকপ্রদ এক ইতিহাস! কাঞ্চনজঙ্ঘা শব্দটি তৎসম কাঞ্চন + জঙ্ঘা মনে হলেও আসলে নামটি স্থানীয় শব্দ ‘কাং চেং জেং গা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ তেনজিং নোরগে তার বই, ম্যান অব এভারেস্ট (গধহ ড়ভ ঊাবৎবংঃ)-এ লিখেছেন ‘তুষারের পাঁচ ধনদৌলত’। এটির পাঁচটি চূড়া আছে, যার চারটির উচ্চতা ৮,৪৫০ মিটারের ওপরে। এ ধনদৌলত ঈশ্বরের পাঁচ ভান্ডারের প্রতিনিধিত্ব করে, এগুলো হলো- স্বর্ণ, রূপা, রত্ন, শস্য, এবং পবিত্র পুস্তক। কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুপম সৌন্দর্য এবং টাইগার হিলের চিত্তাকর্ষক সূর্যোদয় দেখার জন্য প্রতিবছর হাজারো পর্যটক ভিড় করেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব সৌন্দর্য তেঁতুলিয়ায় বসে দেখা যায় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। মেঘমুক্ত আকাশে স্পষ্ট দেখা যায় বরফে ঢাকা পাহাড়ের চূড়া। রাতে দেখা যায় শিলিগুড়ির উজ্জ্বল আলো। পাহাড়েরই অপর ঢালে স্বপ্নপুরী দার্জিলিং। বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর দিনের প্রথম সূর্যোদয়ের সূর্যকিরণের ঝিকিমিকি দৃশ্য সত্যিই মুগ্ধতার মোহ ছড়ায়।
যেভাবে যাওয়া যাবে
রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি বাস যায় তেঁতুলিয়ায়। হানিফ, শ্যামলী ও কেয়াসহ বিভিন্ন পরিবহনের এসব বাসে ভাড়া নেবে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। পঞ্চগড় বা তেঁতুলিয়ার পথে কোনো এসি বাস নেই। তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা-বাগান বা আশপাশের এলাকায় ঘুরাঘুরির জন্য স্কুটার, অটোরিকশা, অটোভ্যান এবং মাইক্রোবাস ভাড়া পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলার দিক দিয়ে তেঁতুলিয়া সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা থাকায় ইচ্ছেমতো ঘুরে উপভোগ করা যাবে দর্শনীয় স্থানগুলো।
থাকার জন্য হোটেল-রেস্টুরেন্ট
দেশের এই উত্তরের উপজেলায় ঘুরতে এলে থাকতে পারবেন হোটেল সীমান্তের পাড়-এ। সরকারিভাবে ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নারে রয়েছে নতুন ভবন। এখানে থাকতে চাইলে আগে থেকেই তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৭০০ টাকা। বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ৪০০ টাকা। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে রয়েছে অনেক আবাসিক হোটেল। ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এসি রুম।
কোন মন্তব্য নেই