Header Ads

Header ADS

ট্যাব-ল্যাপটপের কাছে ‘মৌন’ যৌনজীবন

আপনার বেডরুমের দরজা কি ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের জন্য খোলা? রাতে বিছানায় শুয়ে-বসে ফেসবুক, টুইটারের জগতে আপনার আনাগোনা কি দিনে দিনে বাড়ছে? যদি দু’টি প্রশ্নের উত্তরই ‘হ্যাঁ’ হয়, তা হলে ‘টেক-স্যাভি’ বলে নিজের কাঁধ নিজে চাপড়ানোর আগে দু’বার ভাবুন৷ প্রযুক্তির তালে তাল মেলাতে গিয়ে জীবনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না তো? সাবধান!
বিলেতের ১৫,০০০ মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রযুক্তির কোপে তাদের যৌনজীবনে ছন্দপতন ঘটছে৷ দু’টি সংস্থার করা এই সমীক্ষার রিপোর্ট দেখে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ক্যাথ মার্সার বলেছেন, ‘বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে সাধারণ মানুষ এমনিতেই মানসিক চাপে থাকেন৷ চাকরি, রোজগার– চিন্তার শেষ নেই৷ মন সায় না-দিলে শরীর কাজ করবে কী ভাবে?’ কিন্ত্ত পরিস্থিতি যে আরও ঘোরালো করে তুলেছে মানুষই! সমীক্ষাটি সামনে রেখে মার্সারের তাত্পর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘আধুনিক প্রযুক্তিকে আমরাই টেনে বিছানায় আনছি৷ ল্যাপটপ, ট্যাবলেট খুললেই ফেসবুক, টুইটারের জগত৷ মানসিক চাপ কাটাতে যৌনসঙ্গীর কোনও বিকল্প নেই৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমরা প্রযুক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করছি৷’
বিছানায় প্রযুক্তির অনুপ্রবেশের ফল কী? দেখা যাচ্ছে, প্রায় এক দশক আগেও যেখানে গড় ব্রিটেনবাসী মাসে অন্তত ছ’বার যৌনসংসর্গ করতেন, এখন গড়ে পাঁচবারও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের রাস্তায় হাঁটেন না৷ ২০১০ থেকে ২০১২-র মধ্যে চালানো সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই গড় ৪.৯, মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪.৮৷ অথচ আগের সমীক্ষাগুলিতে উভয় ক্ষেত্রেই গড় ছিল ৬-এর উপর৷ দুশ্চিন্তার শেষ এখানেই নয়৷ কেননা, প্রযুক্তি নির্ভরতার এই প্রবণতায় ছড়াচ্ছে সামাজিক ব্যাধিও৷ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৬ থেকে ৪৪ বছরের যুগলরা অনলাইন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন৷ নীলছবিই তাদের কাছে যৌনমিলনের বিকল্প৷ মার্সার বলছেন, ‘এ-ও বেডরুমে প্রযুক্তির অবাধ প্রবেশের ফল৷’
স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি যৌনসম্পর্কে মানুষের আগ্রহ কমছে? উত্তর, হ্যাঁ৷ মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সমীক্ষায় অনেকে স্বীকার করেছেন, শারীরিক সম্পর্কের আকর্ষণ ক্রমেই তাদের কাছে ফিকে হচ্ছে৷ যদিও যাদের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাদের অতীত কিন্ত্ত বেশ ‘রঙিন’ই ছিল৷ দেখা গিয়েছে, ৪৪ বছরের নীচে মহিলারা গড়ে ৭.৭ জনের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেছেন৷ আর একই বয়সের পুরুষরা? তাদের ক্ষেত্রে গড় ১১.৭! অথচ সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, প্রতারক সঙ্গীকে সহ্য করতে পারেন না অধিকাংশ মানুষ৷ তবে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ নিয়ে তেমন আপত্তি নেই৷ বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে৷ ১৯৯০ সালে যেখানে ১.৮ শতাংশ মহিলা সমলিঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন, সর্বশেষ সমীক্ষায় সেটাই দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ শতাংশে৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার কমবেশি সাড়ে তিন শতাংশেই দাঁড়িয়ে৷
প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক হলো, বর্তমান জীবনধারায় কেউই আর ‘একা’ নন৷ ফেসবুক, টুইটারের মতো সঙ্গী আছে যে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনজীবনের ক্ষেত্রে এই ইতিবাচক দিকই খলনায়ক৷ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনেকেই ‘একা’ থাকতে পছন্দ করেন৷ তার মানে এই নয় যে, যৌনতার প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণ নেই৷ কেননা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যৌনতার স্বাদ তাদের অনেকেই নেন৷ কিন্ত্ত যৌনসঙ্গীতে তীব্র আপত্তি৷ এর ফলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগও কমছে৷ কমছে সংসার পাতার প্রবণতাও৷ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সন্তানধারণের ক্ষেত্রে কিন্ত্ত রীতিমতো হিসেব কষেই সকলে এগোচ্ছেন৷ ছ’টির মধ্যে প্রতি পাঁচটি ক্ষেত্রেই পরিকল্পিত ভাবে গর্ভধারণ হয়েছে৷
সমীক্ষাটি ব্রিটেনে চালানো হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে ফলাফলে খুব বেশি হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কেননা, উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তির অগ্রগতি কমবেশি একই৷ আর্থ-সামাজিক মাপকাঠিতেও বিশাল ফারাক নেই৷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.